মানসিক স্বাস্থ্য হলো সুস্থতার একটি অবস্থা যেখানে কোনও ব্যক্তি তার নিজস্ব দক্ষতা উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপের সাথে লড়াই করতে পারে, উত্পাদনশীলভাবে কাজ করতে পারে এবং তার সম্প্রদায়ের জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

মানষিক স্বাস্থ্য আমাদের চিন্তা, অনুভুতি এওং আচরনের উপর প্রভাব ফেলে। আমাদের পারিপার্শিক চাপ, সম্পর্ক তৈরী ও দৈনন্দিন চাপ সামলানোতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। মানষিকভাবে সুস্থ্য মানুষ কখনো হতাশা, উদ্বেগ ও সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতেই পারে। তবে শারীরিকভাবে সুস্থ্য মানুষ যেমন দ্রুতই অসুস্থ্য অবস্থা হতে সুস্থ্য অবস্থায় ফিরে আসতে পারে তেমনি মানষিক ভাবে সুস্থ্য মানুষও দ্রুত বিপদ আপদ, ট্রমা ও অন্যান্য মানষিক চাপ সামলে নিতে পারে। শারীরিক ও মানষিকভাবে সুস্থ্য মানুষ যেকোন বিপদ আপদ ও সমস্যায় ভেঙ্গে না পড়ে সমস্যার একটা সমাধান বের করে ফেলতে পারে।

আমাদের সকলকেই জীবনের কোনও না কোনও সময়ে সাময়িক ভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক সময়েই মানসিক অবসাদ এবং উদ্বিগ্নতার শিকার হতে হয়। যখন আমরা দেখি আমাদের স্বাভাবিক কাজগুলি ব্যাহত হচ্ছে, তখনই মানসিক অসুস্থতার প্রশ্নটি সামনে আসে। শারীরিক সুস্থতার বিষয়ে আমাদের মনে একটা স্পষ্ট ধারণা ক্রমশই গড়ে উঠছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের সঙ্গে যে অসুখগুলি জড়িয়ে রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা যতটা সচেতন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ততটা সচেতনতা তো দেখাই যায় না, বরং এর বিষয়ে কোনও কথা বলাই যেন নিষেধ।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ (৯৩ শতাংশ) দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা বাধাগ্রস্ত অথবা বন্ধ হয়ে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক জরিপে উঠে এসেছে।

দীর্ঘ লকডাউন, করোনার ভয়, চাকরি হারানো, বেতন কমে যাওয়া, পরিবার বা পাড়াপড়শির আক্রান্ত হওয়া, সামাজিক দূরত্ব, চার দেওয়ালের মধ্যে মূলত নিজেকে বন্দি রাখার প্রভাব এখন ভালোভাবেই পড়ছে সাধারণ মানুষের মনের ওপর। তাঁরা অবসাদগ্রস্ত হচ্ছেন। দুশ্চিন্তা ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে। দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ সহ মানসিক নানা ধরনের সমস্যা। আর অজ্ঞানতার জন্য হোক বা অস্বস্তি বোধ করার কারণে হোক, লোকে এই মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না। নিজের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেন। ফলে সমস্যা আরও বাড়ে। যেকোনো বিপদ মোকাবিলার সময় চাই ধৈর্য, দায়িত্বশীল আচরণ আর সাহস। এই আতঙ্কময় সময়ে কেবল আস্থাভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন। তাঁরা আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে সহায়তা করবেন বিভিন্নভাবে। প্রায় আবদ্ধ শহরে বিচ্ছিন্নতার জন্য অসহায় লাগতে পারে। তাই বন্ধু আর স্বজনদের সঙ্গে ই-মেইল, টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন। পরস্পরের খোঁজ রাখুন। করোনায় সংক্রান্ত কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে কীভাবে, কার কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য গ্রহণ করবেন, তার একটি আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন। কেবল বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া সঠিক তথ্যের ওপর ভরসা রাখুন। নিজের ওপর আস্থা রাখুন। অতীতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।